ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫ , ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের অবহেলার কারনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি


আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-২৩ ১২:০৬:২৭
শিক্ষকদের অবহেলার কারনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি শিক্ষকদের অবহেলার কারনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি


বরিশাল প্রতিনিধি: ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে শিক্ষায় অনিয়ম — স্বাস্থ্যসেবায় ভয়াবহ প্রভাবের আশঙ্কা দেশের দক্ষিনাঞ্চলে সর্ববৃহত্তর নার্সিং কলেজ টি ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কয়েকজন নার্স শিক্ষক এবং একজন অফিস স্টাফ নিয়ে কলেজের সুচনা হয়। শুরুতে কয়েকজন দক্ষ টিচার থাকলেও পরবর্তীতে তারা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান।


এরপরে আর পদায়ন করা হয়নি কোন দক্ষ নার্স টিচার। কোনরকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই সিনিয়র স্টাফ নার্স থেকে সরাসরি এই সকল নার্স টিচারের পদায়ন করা হয়। এমনকি এই কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এর কোন রকম টিচারের অভিঞ্জতা না থাকলে তিনি তিন বছর ধরে পালন করছেন অধ্যক্ষের অতিরিক্ত দায়িত্ব।


এর পুর্বে তিনি হাসপাতালের সুপারভাইজার ছিলেন। বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য দক্ষ ও মানবিক নার্সের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, ল্যাব কার্যক্রমে অনিয়ম এবং শিক্ষকদের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে দক্ষ নার্সের সংকট দেখা দিতে পারে, যা সরাসরি দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় তাদের পাঠ্যসূচি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই তত্ত্বীয় পড়ালেখার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।


একজন শিক্ষার্থী বলেন, “শুধু বই পড়ে নার্সিং শেখা যায় না। রোগীর সামনে কীভাবে কাজ করবো, সেটা হাতে-কলমে শিখতে হয়। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগটাই ঠিকমতো মিলছে না।” অনেক সময় দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে অপেক্ষা করেও শিক্ষকের দেখা পান না।

এছাড়া, বেশ কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, অনেক শিক্ষক ক্লাসে এলেও পাঠদানের মান খুবই দুর্বল। তারা বিষয়টি ঠিকভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেট ঘেটে পড়তে বলে চলে যান। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।


এই পরিস্থিতি থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, নার্সিং শিক্ষার এই অব্যবস্থা ভবিষ্যতে জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ একজন নার্স শুধু পেশাজীবী নয়, তিনি একজন রোগীর প্রাণরক্ষা ও মানসিক সান্ত্বনার অন্যতম ভরসা। যদি তিনি সঠিক প্রশিক্ষণ না পান, তবে রোগীর চিকিৎসার মান পড়ে যাবে এবং জনগণ ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।


বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যসেবায় নার্সদের অবদান চিকিৎসকদের পরেই আসে। তাই নার্সিং শিক্ষাকে গুরুত্ব না দেওয়া মানে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল ভিত দুর্বল করে ফেলা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এতসুন্দর একটা কলেজ বাংলাদেশে আছে কিনা জানিনা, তবে এখনকার লেখাপড়ার মান এত খারাপ তা বলে বোজানো যাবেনা। এর কারন একজন অধ্যক্ষ ই যদি থাকে অদক্ষ তাহলে টিচারদের সে কিভাবে দক্ষ করে গড়ে তুলবে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন- স্যার ম্যাম রা সবাই বরিশাল থেকে আসে, তারা সঠিক সময় কলেজে আসেনা আবার আসার পর তারা বাসার বাজার করতে যায় কীর্তিপাশা বাজারে এখান থেকে সোয়াবিন তৈলটা পর্যন্ত নিয়ে যায় বরিশালে, এখানে আমার প্রশ্ন হল বরিশাল কি সোয়াবিন তৈল ও ক্রয় করা যায় না। যতক্ষন কলেজে থাকে ততক্ষন গল্পগুজব করে নয় তো নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে। এমন ও শিক্ষক আছেন একবছর পর্যন্ত কোন ক্লাস নেননি।


স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন আমার বাড়ির পাশে মনোরম পরিবেশে এই কলেজটি হওয়ার কারনে, ১ম চয়েজ এখানে দেই, আর আমার চান্স হয় এই খানে, পরে দেখি এটা আজাব। বিশাল বড় রকম পাপ করেছি এখানে ভর্তি হয়ে। কোন রকম নিজেদের চেস্টায় আগাচ্ছি।আমরা আসলে কিছুই জানিনা ২য় বর্ষে পড়েও। 


তবে এসব বিষয় শিক্ষার্থীরা কোন কথা বলতে চান না, তারা বলে এগুলো বললেও কোন লাভ হয়না, এর আগে, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শক এসেছেন আমরা তখন বলছি তারা লিখে নিয়ে গেছে কিন্তু কোন কাজ হয় নি, এজন্য আর বলতে মন চায় না। আমরা তো চলে যাবো যারা আসতেছ তারাও শেষ হয়ে যাবে। কারন এখানে কোন নিয়মকানুন নাই, কোন শৃঙ্খলা নাই। মা বাবা ছেড়ে এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি কিন্তু এরকম মেরুদন্ডহীন টিচারদের হাতে পড়তে হবে,  তা বুঝতে পারিনি। অনেক টিাচর আবার বেসরকারি নার্সিং কলেজে ক্লাস নিচ্ছেন নিয়মবর্হিভুত।


শিক্ষকদের এই অবহেলার প্রভাব শুধু শিক্ষার্থীর উপরই নয়, দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়বে দেশের স্বাস্থ্যসেবার উপর। একজন সুশিক্ষিত ও দক্ষ নার্স রোগী পরিচর্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ, সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া তারা ভবিষ্যতে সেবা দিতে গেলে নানা ভুল-ত্রুটি ঘটতে পারে, যা জীবনহানির কারণও হতে পারে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নার্সিং একটি মানবিক ও কারিগরি পেশা। এখানে শিক্ষকেরা যদি দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা গড়ে ওঠে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা।


প্রতিবেদক দুপুর ২টায় গিয়ে কোন শিক্ষককে কলেজে পাননি, তারা আগেই বের হয়ে গেছে, অধ্যক্ষ বের হবে এমন সময় প্রতিবেদক কলেজে প্রবেশ করেন।


সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৮ থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত ক্লাস হওয়ার নিয়ম। কিন্তুু এ নিয়মের কোন তোয়াক্কা করেন না শিক্ষকরা। ৯ টার আগে শিক্ষকরা কলেজে আসেন না, দুপুর ১ টায় আবার কলেজ থেকে চলে যান। এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ গীতা রানী সমদ্দার টিচারদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বললেন আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত হয়েছে।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ